আমি ও মা।

Published by

on

সিটি কলেজে ভর্তির পর আমার হাত খরচের পরিমান একটু বাড়ল। কারণে অকারণে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিতাম। মাঝে মাঝে না বলেও নিতাম। আবার সব নিতাম না; কিছু রাখতাম। যদি ৭৮০ টাকা থাকতো (৭ টা ১০০ টাকার নোট) একটা-দুইটা একশো টাকার নোট নিতাম। বাসায় আসার পর মা বেশ রাগী গলায় জিজ্ঞাসা করতো, “এই তুই টাকা নিছিস?”

Confidently বলতাম “কই, না তো?”

অভিনয় কম জানায় নাটক বেশিদূর এগোতো না। আমি হেসে দিতাম মাও হেসে দিতেন। ব্যস ঝামেলা ডিসমিস।

“পৃথিবীতে মা ই একমাত্র ব্যক্তি যে কখনোই সন্তানকে দেওয়া টাকার হিসাব রাখেন না।”

ক্লাস সিক্স এ পড়ার সময় একবার প্রচন্ড জ্বর হলো। আমার যতদূর মনে পড়ে মা প্রায় দুই তিনটা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছিলো শুধু মাথায় পানি ঢেলে।

“পৃথিবীতে মা ই একমাত্র স্বজন যে সন্তান অসুস্থ হলে নির্ঘুম রাত কাটায়।”

মায়ের আরেকটা অভ্যস ছিল । পরীক্ষার দিন, আমি যখন পরীক্ষা দিতে যেতাম তখন একটা দোয়া পড়ে তিনবার মাথায় ফু দিতেন, যাতে আমি পরীক্ষায় ভাল করি। আমি বলতাম, “হয়েছে ; আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।” এস এস সি, এইচ এস সি পরীক্ষার সময় প্রায়ই দেখতাম মা আমার পরীক্ষার হল থেকে বাড়ী না ফেরা পর্যন্ত নামাজ পড়তেন।

“পৃথিবীতে মা ই একমাত্র আপন জন যে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। অন্য কেউ নয়, শুধু মা ই চায় সন্তান উন্নতি করুক।”

চাকুরী পাওয়ার পর, ছুটিতে যখন বাড়ি আসতাম। প্রথমেই একটা ঘুম দিতাম। তখন পদ্মা সেতু উদ্ভোদন হয়নি। কাজ চলছিল। আসতে দেরি ও কষ্ট দুটোই হতো। তাই এসেই ঘুমিয়ে পড়তাম। উঠে দেখতাম বাটিতে বাটিতে পেঁয়ারা কাটা, আম কাটা, ছবেদা কাটা, কলা; মোটামুটি যা যা আছে, সব মাথার কাছে সিরিয়াল করে রাখা।

আমি রাগ করে বলতাম, আমি কি পেটে ছালা বেঁধে আনছি নাকি। মা হাসি দিয়ে বলতো, গাছের ফল খাবিনা কেন। দুএকটা মুখে দিয়েই, খুঁজতে বের হতাম বন্ধুরা কে কোথায় আছে। তিন দিন থাকলে ৩ ঘন্টা সময় মাকে দেওয়া হয়নি।

এখন ইচ্ছা থাকলেও মাকে সময় দেয়া সম্ভব নয়। টাকা থাকলেও মাকে কিছু খাওনো সম্ভব নয়। ইচ্ছা থাকলেও মাকে একটা শাড়ী কিনে দিয়ে বলতে পারবো না, মা শাড়িটা তোমার পছন্দ হয়েছে?

এমন একটা দিন নেই যে মাকে আমার মনে পরে না। খুব ভোরে যখন ঘুম ভেঙে যায়, মনে হয় মা বোধয় ফজরের নামাজ পড়ে, বারান্দায় বসে মুড়ি দিয়ে চা খাচ্ছে। এখনো মনে হয়।

আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে মায়ের রুমটাতেই থাকছি। প্রায় দেড় বছর মনে হতো মা আমার বালিশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমার একটুও ভয় লাগতো না।

আমার কত ভালো মা !! ভালো থেকো মা। একদিন দেখা হবে !!

“মা বুঝি গান গাইত, আমার

দোলনা ঠেলে ঠেলে;

মা গিয়েছে, যেতে যেতে

গানটি গেছে ফেলে।”

Leave a comment

Previous Post